আরতী কি??আরতী করার নিয়মাবলিঃ What is Aarti? Rules for doing Aarti:

 আরতী কি??আরতী করার নিয়মাবলিঃ


আরতির তত্ত্ব -----"আ" অর্থে ব্যাপ্তি; "রতি" অর্থে প্রেম, ভালাবাসা ও অনুরাগ। যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীভগবানের নিজের প্রীতি বর্ধিত হয় অর্থাৎ তিনি ভক্তের প্রতি প্রসন্ন বা সন্তুষ্ট হন এবং ভগবানের প্রতিও ভক্তের প্রেম, প্রীতি,ভালবাসা, ভক্তি ও অনুরাগ বৃদ্ধি পায় তাকে আরতী বলে।
অতএব, আরতী ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের গভীর ভাবভক্তি পূর্ণ একটি মহা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের ভাব ও ভক্তির মাধ্যমে, আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের মাধ্যমে ও সম্পূর্ণ আত্মনিবেদনের মাধ্যমে, আরতীর অনুষ্ঠান হয় সফল,সার্থক ও সুন্দর।

১।ধূপ - - - ক্ষিতিতত্ত্ব — দেহের প্রতীক-দেহ সমর্পণ।
২।জলশঙ্খ - - - অপ্-তত্ত্ব-স্নেহপ্রীতি প্রতীক-হৃদয়পাত্র ভরা প্রীতি সমর্পণ।
৩।পঞ্চদীপ - - - তেজতত্ত্ব-পঞ্চপ্রাণের প্রতীক-পঞ্চপ্রাণ সমর্পণ।
৪।কর্পূরদীপ - - - বায়ুতত্ত্ব-মন বুদ্ধির প্রতীক-মন সমর্পণ।
৫!বস্ত্র - - - আকাশতত্ত্ব-লজ্জাভয়াদির প্রতীক-লজ্জাদি সমর্পণ।
৬।পুষ্পচন্দন ভক্তিমাখা আত্মসমর্পণ সর্বতোভাবে নিজেকে দান ।
৭।ব্যাজন - - - পাখা চামর - - - অহংকার তত্ত্ব- - অহং সত্তা ঈশ্বরে মিশিয়ে দেওয়া।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছেন, আন্তরিক ভাবভক্তি নিয়ে প্রতিদিন পূজারতীর মাধ্যমে আমার শক্তি সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। গুরু শক্তি লাভের ইহা একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।শাস্ত্রীয় পূজার বিধান সহজ নয় বরং জটিলও বলা যায়। কিন্তু আরতীর অনুষ্ঠান খুবই সহজ সাধ্য। কারণ আরতির অনুষ্ঠান কেবল মাত্র ভাব ও ভক্তির মাধ্যমে সু সম্পন্ন হয়। যারা শাস্ত্রীয় পূজার বিধি ও মন্ত্র জানেন না তারা ভক্তি ভাবের সাথে একমাত্র আরতীর মধ্য দিয়েই সকল পূজার ফল লাভ করতে পারেন। তাই ভাব ও ভক্তি পূর্ণ আরতীর অনুষ্ঠান হলো সকল পূজার সার।শাস্ত্রীয় পূজা যদি বিধিহীন ও মন্ত্রহীন হয়, তবে ভক্তি পূর্ণ আরতীর মধ্য দিয়ে তা সম্পূর্ণতা লাভ করে। এ প্রসঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেব ও দেবী পার্বতীকে বলেছেন-
("মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং যৎকৃতং পূজনং হরেঃ।
সর্ব্বং সম্পূর্ণতামেতি কৃতে নীরাজনে শিবে"।।
অর্থাৎঃ-হে দেবী পার্বতী, শ্রীভগবানের পূজা যদি মন্ত্রহীন ও ক্রিয়াহীন হয়, তবে নীরাজন বা আরতীর মাধ্যমে তা সম্পূর্ণতা লাভ করে।)
ভগবান কে ধূপ, দীপ, পুষ্প,
প্রদীপ, চামর, অর্ঘ্যপাত্র, ধৌতবস্ত্র, ব্যজন
ইত্যাদি দ্বারা ভগবান কে আরতী করতে হয়।
শ্রী বিগ্রহের পদতলে ৪ বার,নাভিদেশে ২ বার, মুখমন্ডোলে ৩ বার,সর্বএ গাত্রকে ৭ বার করিয়া এক এক প্রকারের আরতী করা হয়।

এর কম নয়। বেশী যত ইচ্ছা করা যায়।
উপরের প্রতিটি দ্রব্য প্রতি বিগ্রহে
অঙ্গতে বুলিয়ে (বা) ও মনে মনে তত্ত্ব চিন্তা
করতে করতে আরতি মাধ্যমে আত্মসমর্পণ
করতে হয়।।
আরতি নিবেদন করার নিয়ম কি ? 

উত্তরঃ-

((১))নীচের দ্রব্যগুলি একটি থালায় সাজিয়ে পূজাবেদীর বামদিকে রাখতে হয়ঃ-
ক) তিনটি ধূপকাঠি
খ) ঘৃত প্রদীপ ( একটি বা সম্ভব হলে পাঁচটি পলিতা সহ )
গ) বিগ্রহগনের অভিষেকের জন্য একটি জল-শঙ্খ
ঘ) একটি সুন্দর বস্ত্র বা রুমাল
চ) এক রেকাবি সুরভিত ফুল
((২)) পূজাবেদীর কাছাকাছি আরও যে দ্রব্যগুলি রাখতে হবে, তা হলঃ
ক) চামর
খ) ময়ূর পালকের পাখা
গ) ঘন্টা
ঘ) পঞ্চপাত্র
ঙ) বাজানোর শঙ্খ
চ) আসন ( বসে/দাঁড়িয়ে আরতির জন্য )
((৩)) আচমনঃ
(ক) পূজা শুরু করার পূর্বে নিজের শুদ্ধি করণের জন্য ও তিলক দেওয়ার পর্বে আচমন করতে হয় কিভাবে আচমন করবেন তা জানুনঃ
ক) তিনফোটা জল পঞ্চপাত্র (বিশেষ তামার চামচ) থেকে নিয়ে ডান হাতের তালুতে রাখতে হয়।এবং "ওঁ কেশবায় নমঃ" মন্ত্রে সেটা চুমুক দিতে হয়। এবার ঐ হাতের তালুতে আরেক ফোঁটা জল দিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয়।
খ) আরও দু'বার ঠিক এরকম করতে হয়, তবে দ্বিতীয় বারের জন্য মন্ত্র "ওঁ নারায়ণায় নমঃ।এবং তৃতীয় বারের জন্য মন্ত্র "ওঁ মাধবায় নমঃ"।
গ) সবশেষে আগের মতো তিন ফোঁটা জল নিয়ে তা একদিকে ফেলে দিতে হয় এবং সেই সাথে এই মন্ত্রটি জপ করতে হয়, "ওঁ গোবিন্দায় নমঃ"।
ঘ) এরপর প্রণাম নিবেদন করতে হয় এবং পূজা শুরু করার অনুমতিদানের জন্য গুরুদেবকে অনুরোধ করতে হয়।
((৪)) আরতির পর্যায়গুলি নিম্নরূপঃ
ক) তিনবার শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে আরতির আরম্ভের সংকেত জ্ঞাপন করতে হয়। পঞ্চপাত্র থেকে জল নিয়ে শঙ্খটি তখনই ধুয়ে রাখতে হয়।
খ) প্রতিটি দ্রব্য আরতিতে ব্যবহারের পূর্বে ডান হাত শুদ্ধ করে নিতে হয়। পন্থা হল ডান হাতে পঞ্চপাত্র থেকে তিন ফোটা জল দিতে হয়। প্রতিটি দ্রব্য একই প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ করতে হয়।
গ) আরতির সময় ধূপ নিবেদন করতে হয় প্রতি বিগ্রহের পাদপন্মে চারবার, কোমরে দু'বার, এবং দেহের অপর সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সাতবার ( বিগ্রহ-অঙ্গের চতুর্দিকে বৃত্ত রচনার মাধ্যমে)
ঘ) ঘৃত প্রদীপও একইভাবে নিবেদন করতে হয় তবে তা ছাড়াও বিগ্রহের মুখপদ্মে প্রদীপ তিনবার (বৃত্ত রচনার মাধ্যমে ) নিবেদন করতে হয়।
ঙ) অভিষেকের উদ্দেশ্যে রাখা জল জলশঙ্খের মধ্যে ঢালতে হয়। তারপর জলশঙ্খ বিগ্রহগণের মস্তকের উপরিভাগে সাতবার আবর্তিত করার মাধ্যমে নিবেদন করতে হয়।
চ) বস্ত্রখণ্ড ( স্মানের পর বিগ্রহগণের শ্রীঅঙ্গ মুছে দেওয়ার জন্য) ঘৃত প্রদীপের নিয়মে নিবেদন করতে হয়।
ছ) পুষ্প চারবার পাদপদ্মে নিবেদন করতে হয়।
জ) তারপর যত্ন সহকারে দোলানের মাধ্যমে চামর নিবেদন করতে হয়।
ঝ) একইভাবে ময়ূর-পাথার ব্যাজন করতে হয়, তবে শীতের মাসগুলোতে নয়( অর্থাৎ সাধারনত কার্ত্তিক থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত ময়ূর পাখা নিবেদন করা হয় না)।
ঞ) সমস্ত দ্রব্যগুলি সর্বপ্রথম গুরুদেবকে নিবেদন করতে হয়। তারপর পরমগুরুকে এবং বাঁদিকে থেকে শুরু করে পরপর বিগ্রহগণকে নিবেদন করতে হয়। যেখানে তুলসী দেবী বিরাজিত থাকবেন, সেখানেও অবশ্যই এই সমস্ত দ্রব্যদি তাকে নিবেদন করতে হবে, প্রতিটি তিনবার করে বৃত্ত করে। যেখানে ব্যাসাসন থাকবে সেখানেও এরকম করতে হবে। অবশ্যষে প্রত্যেক দ্রব্য চারটি বৃত্তের মাধ্যমে সমবেত ভক্তগণকে নিবেদন করতে হয়।
ট) প্রতিটি দ্রব্য নিবেদনের সময় বাম হাতে সর্বক্ষণ ঘন্টা বাজানের কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ঠ) তারপর (ক) এ প্রদর্শিত নিয়মে পুনরায় শঙ্খধ্বনি করতে হবে।
ড)তারপর প্রেমধ্বনি করতে হবে।
ঢ) পরিশেষে পূজাবেদী ও মেঝে মুছে দিতে হয়।
((৫))যেখানে পূর্ণ আরতি করা সম্ভব নয়, সেখানে নিম্মোক্ত দ্রব্যগুলি দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আরতি নিবেদন করা যেতে পারে।
* ধূপ * ঘৃত প্রদীপ * পুষ্প
((৬))বিগ্রহ পূজার আরও অনেক বিস্তৃত বিধি নিয়মাদি রয়েছে। যে সব ভক্ত বিশদভাবে সেগুলি জানতে আগ্রহী, তারা মন্দিরের প্রধান পূজারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
((৭))স্মরণ রাখা উচিত যে, বিগ্রহ পূজার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আন্তরিক শ্রদ্ধাভাব ও ভক্তির সঙ্গে সমস্ত দ্রব্যগুলি নিবেদন করা।

 

উপাসনাকে বলে 'সন্ধ্যা বন্দনম্'। এটি সূর্যের তিন অবস্থানের কালে করা হয়। অবস্থানগুলো এরকম -

    প্রথম পদ/ সূর্যোদয় কাল — বিস্তার ২ মুহূর্ত (সূর্যোদয়ের আগের ৪৮ মিনিট + সূর্যোদয়ের পরের ৪৮ মিনিট)। নাম - প্রাতঃসন্ধ্যা।
    দ্বিতীয় পদ/ মধ্যাহ্ন কাল — ২ মুহূর্ত সূর্য মাথার ওপর আসার আগের ৪৮ মিনিট + সূর্য মাথার উওপর আসার পরের ৪৮ মিনিট)। নাম - মধ্যাহ্ন্যিক।
    তৃতীয় পদ/ সূর্যাস্ত কাল — ১ মুহূর্ত (সূর্যাস্তের পরের ৪৮ মিনিট)। নাম - সায়ং সন্ধ্যা।

মঙ্গল আরতি
সংসার-দাবানল-লীঢ় লোক-ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্।
প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ১ ॥
সংসার-দাবানল-সন্তপ্ত লোকসকলের পরিত্রাণের জন্য, যে কারুণ্য-বারিবাহ তরলত্ব প্রাপ্ত হইয়া কৃপাবারি বর্ষণ করেন, আমি সেই কল্যাণ গুণনিধি শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।

মহাপ্রভোঃ কীর্তন-নৃত্য-গীত বার্দিত্রমাদ্যম্মনসো রসেন।
রোমাঞ্চ-কম্পাশ্রু-তরঙ্গভাজো বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ২

সংকীর্তন, নৃত্য, গীত ও বাদ্যাদি দ্বারা শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রেমরসে উন্মত্ত-চিত্ত যাঁহার রোমাঞ্চ, কম্প,-অশ্রু-তরঙ্গ উদ্গত হয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

শ্রীবিগ্রহারাধন-নিত্য-নানা-শৃঙ্গার-তন্মন্দির মার্জনাদৌ।
য্ক্তুস্য ভক্তাংশ্চ নিযুঞ্জতোহপি বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ 3

যিনি শ্রীবিগ্রহের বেশ-রচনা ও শ্রীমন্দির-মার্জন প্রভৃতি নানাবিধ সেবায় স্বয়ং নিযুক্ত থাকেন এবং (অনুগত) ভক্তগণকে নিযুক্ত করেন, সেই গুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

চতুর্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-স্বাদ্বন্নতৃপ্তান্ হরিভক্তসঙঘান্।
কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজনঃ সদৈব বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ৪ ॥

যিনি শ্রীকৃষ্ণভক্তবৃন্দকে চর্ব্য, চুষ্য, লেহ্য ও পেয়-এই চতুর্বিধ রসসমন্বিত সুস্বাদু প্রসাদান্ন দ্বারা পরিতৃপ্ত করিয়া (অর্থাৎ প্রসাদ-সেবাজনিত প্রপঞ্চ-নাশ ও প্রেমানন্দের উদয় করাইয়া) স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

শ্রীরাধিকামাধবয়োরপার-মাধুর্যলীলা গুণ-রূপ-নাম্নাম্।
প্রতিক্ষণাস্বাদন-লোলুপস্য বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ৫ ॥

যিনি শ্রীরাধামাধবের অনন্ত মাধুর্যময় নাম, রূপ, গুণ ও লীলাসমূহ আস্বাদন করিবার নিমিত্ত সর্বদা লুব্ধচিত্ত, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

নিকুঞ্জযুনো রতিকেলিসিদ্ধ্যৈযা যালিভির্যক্তিরপেক্ষণীয়া।
তত্রাতিদাক্ষাদতিবল্লভস্য বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ৬ ॥

নিকুঞ্জবিহারী ব্রজযুবযুগলের রতিক্রীড়া সাধনের নিমিত্ত সখীগণযে যে যুক্তির অপেক্ষা করিয়া থাকেন, তদ্বিষয়ে অতি নিপুনতাপ্রযুক্ত যিনি তাঁহাদেও অতিশয় প্রিয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

সাক্ষাদ্ধরিত্বেন সমস্তশাস্ত্রৈ-রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সদ্ভিঃ।
কিন্তু পভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ৭॥

নিখিল শাস্ত্র যাঁহাকে সাক্ষাৎ শ্রীহরির অভিন্ন-বিগ্রহরূপে কীর্ত্তন করিয়াছেন এবং সাধুগণও যাঁহাকে সেইরূপেই চিন্তা করিয়া থাকেন, কিন্তু যিনি প্রভু ভগবানের একান্ত প্রেষ্ঠ, সেই (ভগবানের অচিন্ত-ভেদাভেদ-প্রকাশ-বিগ্রহ) শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।

যস্য প্রসাদাদ্ভগবৎ-প্রসাদো যস্যাপ্রসাদান্ন গতিঃ কুতোহপি।
ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রী-সন্ধ্যং বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥ ৮ একমাত্র যাঁহার কৃপাতেই ভগবদনুগ্রহ লাভ হয়, আর যিনি অপ্রসন্ন হইলে জীবের কোথার গতি নাই, আমি ত্রিসন্ধ্যা সেই শ্রীগুরুদেবের কীর্তিসমূহ স্তব ও ধ্যান করিতে করিতে তাঁহার পাদপদ্ম বন্দনা করি।
                              সন্ধারতি

নামযজ্ঞ আরম্ভিল মধুর বৃন্দবনে।

হরে কৃষ্ণ হরে রাম বলরে বদনে।।

বেলা গেল সন্ধ্যা হল ঘরে ঘরে বাতি।

আজি প্রভুর মহারাজের মঙ্গল আরতি।।

ধূপ দীপ গন্ধ পুষ্প হাতেতে লইয়া।

প্রভুর আরতি কর নাচিয়া নাচিয়া।।

শঙ্খ বাজে ঘন্টা বাজে,বাজে করতাল।

মধুর মৃদঙ্গ বাজে শুনিতে রসাল।।

হরি হরি বল সবে আর সব মিছে।

পলাইতে পথ নাহি যম আছে পিছে। ।

ব্রহ্মা আদি  দেব যারে ধ্যানে নাহি পায়।

সে হরি বঞ্চিত হলে কি হবে উপায়।

শিব শুক নারদ সবে বেদ বিচারী।

পেলনা নামের অন্ত অনন্ত মুরারি।।

যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভজ নিষ্ঠা করি।

নামের সহিত আছে আপনি শ্রীহরি।।

হরি নাম কৃষ্ণ নাম বড়ই মধুর।

যেই জন কৃষ্ণ ভজে সে বড় চতুর।।

নাম ভজ নাম চিন্ত নাম কর সার।

নাম বিনে ভবার্ণবে গতি নাহি আর।।

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে,

হরে রাম,হরে রাম,রাম রাম, হরে হরে
ভোগারতি

ভজ ভকত-বত্সল শ্রী-গৌরহরি
শ্রী-গৌরহরি সোহি গোষ্ঠ-বিহারী,
নন্দ-জশোমতী-চিত্ত-হারী

বেলা হো ' লো, দামোদর, আইস এখানো
ভোগ-মন্দিরে বোসি' কোরহো ভোজন

নন্দের নির্দেশে বৈসে গিরি-বর-ধারী
বলদেব-সহ সখা বৈসে সারি সারি

শুকতা-শাকাদি ভাজি নালিতা কুষ্মাণ্ড
ডালি ডাল্না দুগ্ধ-তুংবী দধি মোচা-খংড

মুদ্গ-বড়া মাষ-বড়া রোটিকা ঘৃতান্ন
শষ্কুলী পিষ্টক খীর্ পুলি পায়সান্ন

কর্পূর অমৃত-কেলি রংভা খীর-সার
অমৃত রসালা, অম্ল দ্বাদশ প্রকার

লুচি চিনি সর্পূরী লাড্ডু রসাবলী
ভোজন করেন কৃষ্ণ হো 'য়ে কুতহলী

রাধিকার পক্ক অন্ন বিবিধ ব্যঞ্জন
পরম আনন্দে কৃষ্ণ করেন ভোজন

ছলে-বলে লাড্ডু খায্ শ্রী-মধুমংগল
বগল বাজায্ আর দেয় হরি-বোলো

রাধিকাদি গণে হেরি' নয়নের কোণে
তৃপ্ত হো 'য়ে খায্ কৃষ্ণ জশোদা-ভবনে

ভোজনাংতে প্রিয়ে কৃষ্ণ সুবাসিত বারি
সবে মুখ প্রক্ষালয় হ'য়ে সারি সারি

হস্ত-মুখ প্রক্ষালয় যত সখা-গুণে
আনন্দে বিশ্রাম কোরে বলদেব-সনে

জম্বুল রসাল আনে তাম্বুল -মসালা
তাহা খেযে কৃষ্ণ-চন্দ্র সুখে নিদ্রা গেলা

বিশালাক্ষ শিখি-পুচ্ছ-চামর ঢুলায়
অপূর্ব শয্যায় কৃষ্ণ সুখে নিদ্রা যায়

যশোমতী-আজ্ঞা পে'য়ে ধনিষ্ঠা-আনীতো
শ্রীকৃষ্ণ-প্রসাদ রাধা ভৃঞ্জে হ'য়ে প্রীতো

ললিতাদি সুখী-গণ অবশেষ পায়
মনে মনে সুখে রাধা-কৃষ্ণ-গুণ গায়

হরি লীলা এক্-মাত্র যাঁহার প্রমোদ
ভোগারতি গায্ ঠাকুর্ ভকতিবিনোদ

তুলসী প্রনাম মন্ত্র

বৃন্দায়ৈ তুলসী দেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ !চ ।

কৃষ্ণভক্তিপ্রদে দেবী! সত্যবত্যৈ নমো নমঃ ।।

অনুবাদঃ কেশবপ্রিয়া বৃন্দাদেবী যিনি কৃষ্ণ ভক্তি প্রদান করেন সেই সত্যবতী তুলসী দেবীকে আমি বারবার প্রনাম নিবেদন করি।

শ্রী শ্রী তুলসী আরতি

নমো নমঃ তুলসী ! ক্রিশ্নপ্রেয়সী !

রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাষী ।

যে তোমার শরন লয়, তাঁর বাঞ্চা পূর্ণ হয় ,

কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবনবাসী।

      মোর এই অভিলাষ , বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস।

নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপরাশি।।

এই নিবেদন ধর, সখীর অনুগত কর,

সেবা-অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী।

দিন কৃষ্ণদাসে কয়, এই যেন মোর হয়,

শ্রীরাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি।।

তুলসী-প্রদক্ষিণ মন্ত্র

যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মাহত্যাদিকানি চ ।

তানি তানি প্রনশ্যন্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে ।।

অনুবাদঃ তুলসী দেবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্রহ্মা হত্যা সহ গুরুতর পাপ সমূহ পদে পদে বিনষ্ট হয়।

শ্রী শ্রী নৃসিংহদেবের আরতি :--

নমস্তে নরসিংহায়-

প্রহল্লাদল্লাদ দায়িনে,

হিরণ্যকশিপুর্বক্ষহ শিলাটঙ্ক নখালয়ে।

ইতো নৃসিংহ ,পরতো নৃসিংহ,

যতো যতো যামী ততো নৃসিংহ।

বর্হি নৃসিংহ ,হৃদয়ে নৃসিংহ -

নৃসিংহমাদিং স্বরনংপ্রপদ্যে।

তবকরোকমলবরে নখমদ্ভুতশৃঙ্গং,

দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভৃঙ্গম।

কেশব ধৃত নরহরিরূপ -

জয় জগদীশ হরে,জয় জগদীশ হরে,

জয় জগদীশ হরে।

 


সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?  

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?

 

 

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

 
আরো পড়ুন.....

আমাদের সমস্ত দুঃখের কারণ অজ্ঞনতা। সুতরাং জানতে হলে পড়তে হবে।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে  মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা প্রশ্ন-উত্তরে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

 একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি এবং বছরের সব একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

এখানে ক্লিক করুন

 

আরতি-উপসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন



সনাতন পারমার্থিক জ্ঞান সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন


অডিও ভিডিও ভজন-আরতি-নামকীর্তন শুনুন এবং ডাউনলোড করুন নিচের লিংকে ক্লিক করে...

 এখানে ক্লিক করুন


 
 
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার ‍সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........................................

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ