জ্যোতিষ শাস্ত্র কেন মানবো?
জ্যোতিষশাস্ত্র হল এমন একটি শাস্ত্র, যে শাস্ত্র দ্বারা মানুষের ভাগ্য বিচার করা হয় | অর্থাৎ মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় | কিন্তু কিভাবে? | কিভাবে মহাকাশে অবস্থিত, কিছু গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের মাধ্যমে মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা যায়?| আবার জ্যোতিষশাস্ত্রের আরও একটা অংশ হলো সমুদ্রশাস্ত্র, এই শাস্ত্রে মানুষের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বিচার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে | সমুদ্র শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হস্তরেখা | শুধুমাত্র হাতের রেখা বিচার বিশ্লেষণ করে ও মানুষের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয় | কিন্তু কিভাবে? | আমি একজন জ্যোতিষ শিক্ষার্থী ( SKVSA) PHD, Kolkata আমি নিজেকে জ্যোতিষ বিদ্ বলেও পরিচয় দিয়ে থাকি, কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্রের গভীরতা এতটাই যে পিএইচ ডির হাজারো ডিগ্রির কাগজ অর্জন করলেও এই শাস্ত্রের সম্পূর্ণ আয়ত্ত করা সম্ভব না| তা যাইহোক এখন প্রশ্ন হল গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান দ্বারা ও হাতের রেখা বিচার বিশ্লেষণ করে, কিভাবে মানুষের স্বভাব চরিত্র অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা সম্ভব?| সবার প্রথমে বলে রাখি, কোন কিছুর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে হলে, জানার আগ্রহই মানুষকে জানতে সাহায্য করে | অবিশ্বাসের ভাবধারা নিয়ে কখনোই সত্য সন্ধান করা সম্ভব নয়| জ্যোতিষশাস্ত্র হলো বেদের একটি অঙ্গ, আর এই বেদের জ্ঞান অধ্যয়ন করে উপলব্ধি করতে হয়, নিজের কল্পনা শক্তির দ্বারা | আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ | নেকোলাস বলেছিলেন দেখবার জন্য চোখের যেমন প্রয়োজন, আলোর যেমন প্রয়োজন, তেমনি কোন জ্ঞান অর্জন করতে হলে আমাদের ভাবনার প্রয়োজন | অর্থাৎ যে জিনিস দেখা যায় না তাকে কল্পনা শক্তির দ্বারা উপলব্ধি করতে হয় | এবার আসি মূল বিষয়ে, কথায় আছে যা আছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তা আছে আমাদের এই অঙ্গে, আর এই কথাই সত্য | অর্থাৎ পৃথিবী যা দিয়ে তৈরি আমাদের শরীর ও তাই দিয়ে তৈরি | যেমন মাটি, আগুন, বায়ু, জল, আরও যা কিছু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আছে তার সবকিছুই |উদাহরণস্বরূপ পৃথিবীতে তিন ভাগ জল একভাগ স্থল আমাদের শরীরে ও তাই | মানুষের শরীরে 60% থেকে 70% জল থাকে | পৃথিবীর ভূ মধ্যভাগে আগুন আছে, আমাদের শরীরে ও তাই | যার দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা সৃষ্টি হয় |এ ছাড়াও আমরা যা দেখতে পাই বা দেখতে পাই না, তার সবকিছুই আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত আছে | যেমন রক্তে লৌহ কণিকা, শ্বেত কণিকা, এছাড়াও আরও অনেক কিছু, অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু | আবার যে জিনিষ দেখতে পাই না আত্মা, মন, শুক্রাণু ইত্যাদি | মানুষ মারা গেলে মন, আত্মা, শুক্রাণু, তাপ, এই সব কিছুই থাকে না, আর এই গুলো মানুষের শরীরের কোন অংশে থাকে তাও কেউ সঠিক জানে না | আরো অনেক কিছু আছে যা আমরা জানিনা, যেগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়, শুধুমাত্র উপলব্ধি করা যেতে পারে | যেমন আজকের দিনের মোবাইল, ইন্টারনেট, মেমোরি, সফটওয়্যার, এবং ব্রহ্মান্ডে যা কিছু আছে তার সবকিছুই আমাদের শরীরে আছে | না মোবাইল নেই, কিন্তু ইন্টারনেট, মেমোরি, সফটওয়্যার, সবকিছুই আমাদের শরীরের মধ্যে আছে, এই সবই প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে | সবার প্রথমে আমি Memory ব্যাখ্যা দেবো অর্থাৎ আমাদের স্মৃতিশক্তি | বিজ্ঞান বলছে মানুষের স্মৃতিশক্তি একটি সুপারফাস্ট কম্পিউটারের থেকেও অনেক বেশি, মানুষ তার কিঞ্চিত মাত্র ব্যবহার করতে পারে | software, ধরুন আপনি ও আমি একই দিনে দুজনে একই রকম দুটো মোবাইল কিনেছি, আপনার মোবাইলে আপনি কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করছেন, আর আমার মোবাইলে আমি কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করছি, দুজনের মোবাইল এক কিন্তু দুজনের কাজ করার জন্য সফটওয়্যার অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন আলাদা, সেই কারণে আপনার মোবাইলে এক রকম কাজ হচ্ছে আমার মোবাইলে আর এক রকম কাজ হচ্ছে | ঠিক তেমনি আপনার শরীর ও আমার শরীর একই সিস্টেম এ তৈরী, সমস্ত অঙ্গ একই রকম কাজ করে, আমরা আলাদা আলাদা বড় হওয়ার কারণে আলাদা আলাদা শরীর হওয়ার কারণে আমাদের চিন্তা আলাদা | আপনার চিন্তার সৃষ্টি হয় আপনার সফটওয়্যার অনুসারে, অর্থাৎ আপনার শরীরে যা প্রবেশ করেছে তার অনুসারে, যেমন আপনি যা খেয়েছেন, যা দেখেছেন, যা শুনেছেন, যা শিখেছেন, আপনি যা জানেন, সেই অনুপাতে আপনার চিন্তা সৃষ্টি হবে | যেমন আপনি একটা শব্দ শুনলেন "কৃষ্ণ" আপনার মনে একটা কৃষ্ণের ছবি সৃষ্টি হল, আপনি মনে মনে তাকে ঈশ্বর রুপে দেখে ফেললেন, কারণ আপনি ছোট থেকেই জেনেছেন, বুঝেছেন, দেখেছেন, যে কৃষ্ণ ভগবান, তাই আপনার মেমোরি তে তার ছবি লোড আছে, আপনি কৃষ্ণ শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সফটওয়্যার আপনাকে কৃষ্ণের ছবি অনুভব করিয়েছে | আর আমি কৃষ্ণের নাম কখনো শুনিনি, সুতরাং কৃষ্ণ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে প্রশ্ন চিহ্ন সৃষ্টি হল, কৃষ্ণ কি? | অর্থাৎ আপনার মেমোরি তে যা আছে আপনার সফটওয়্যার আপনাকে তাই বোঝালো, আর আমার মেমোরিতে যা আছে আমার সফটওয়্যার সেই অনুসারেই কাজ করলো | এবার আসি Internet, অর্থাৎ সংযোগ | আগেই বলেছি সব কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়, কিছু বিষয়ে উপলব্ধি করে বুঝতে হয় | যেমন আপনি কোন বিষয় নিয়ে ভাবছেন, ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আপনার মনে আইডিয়া চলে এল, এটাই হলো ইন্টারনেট | আপনি ভাবছেন এটা আবার কেমন যুক্তি, না মানে আমি বলতে চাই আইডিয়া কোথা থেকে এলো?, এটাকে আপনি কি বলবেন? | শাস্ত্র বলছে কোন বিষয় নিয়ে এক ভাবে চিন্তা করাকে ধ্যান বলে, আর এই ধ্যানের মাধ্যমেই উপলব্ধি করা কে জ্ঞান বলে | আজ আমরা কোন বিষয়ে জানতে হলেই ইন্টারনেটে খোঁজ করে থাকি, কিন্তু শাস্ত্র বলছে, ধ্যানের মাধ্যমে সমস্ত ঞ্জান প্রাপ্ত করা সম্ভব | স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন ভালো না করতে পারলেও ভালো চিন্তা কর, কারণ মানুষের চিন্তা কখনই বিলুপ্ত হয় না, তোমার চিন্তা কখনো না কখনো, কোনো মানুষের মধ্যে প্রবেশ করবে, আর সে তোমার এই চিন্তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, এটা স্বামী বিবেকানন্দের উপলব্ধি | আবার একটা কথা শোনা যায় যে মানুষের চিন্তাধারার ইথারেতে ভাসে, যেমন চিন্তা করে মানুষ তেমন মানুষ পায় পাশে | আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন চিন্তাই সর্বশক্তিমান | কোন বিষয়ে এক ভাবে চিন্তা করাকে ধ্যান বলে | আমরা ভগবান শিবের কথা সবাই জানি তার ধ্যানমগ্ন মূর্তি বা ছবি আমরা বেশি দেখতে পাই, আর এই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার তৃতীয় নয়ন খুলতো | আবার যেমন বুদ্ধদেবের মূর্তি ও আমরা ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখতে পাই এবং জানাযায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার দিব্যদৃষ্টি খুলতো, এবং তিনি ব্রহ্মান্ডের অবস্থান ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বলে দিতে পারতেন |
এছাড়াও আরো অনেক মহাপুরুষ আছে যাদের ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখা যায় | এই ধ্যানের মাধ্যমে পরমাত্মার সঙ্গে সংযোগ হয়, সেখান থেকেই সমস্ত জ্ঞানের প্রাপ্তি সম্ভব | তাহলে মূল কথা হলো চিন্তার মাধ্যমে কোন জ্ঞান প্রাপ্তিকে ইন্টারনেট কানেকশন বলা কি খুবই অযৌক্তিক | তাহলে মোটামুটি ভাবে একটা যুক্তি দাঁড় করালাম যে, যা আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তা আছে আমাদের এই অঙ্গে | এবার আসি আমাদের মূল বিষয় আমাদের গ্যালাক্সি ইউনিভার্সের একটি অঙ্গ, সৌরজগৎ গ্যালাক্সির অঙ্গ, পৃথিবী সৌরজগতের একটি অঙ্গ, আর আমরা পৃথিবীর একটি অঙ্গ | ইউনিভার্স এর পুরো প্রক্রিয়া জিবন্ত অর্থাৎ অ্যাক্টিভ, সূর্য জীবন্ত, পৃথিবী জীবন্ত, পৃথিবীর প্রকৃতি জীবন্ত, প্রকৃতির আমরা জিবন্ত | অর্থাৎ পুরো ইউনিভার্সের জীবন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমাদের জীবন প্রক্রিয়া, সুতরাং ইউনিভার্স এর প্রভাব আমাদের গ্যালাক্সিতে আছে, গ্যালাক্সির প্রভাব সৌরজগতে, আছে সৌরজগতের প্রভাব পৃথিবীর উপরে, আর যা-কিছুর প্রভাব পৃথিবীর উপরে আছে তা আমাদের উপরও আছে | তাই জ্যোতিষ শাস্ত্র পৃথিবীর কে কেন্দ্র করে, সূর্য্য সহ, পাঁচটি গ্রহ, একটি উপগ্রহ, ও দুটি ছায়াগ্রহ রাহু ও কেতু কে ধরা হয়েছে, যদিও বিজ্ঞান মতে সূর্য নক্ষত্র, চন্দ্র উপগ্রহ, আর রাহু কেতু দুটি ছায়া | কিন্তু শাস্ত্র মতে আমরা যা থেকে কিছু গ্রহণ করি, তাদের গ্রহ বলা হয়, চন্দ্র সূর্য থেকে আমরা কী গ্রহণ করি তা সকলেই জানি, এছাড়াও আরো পাঁচটি গ্রহ সহ, দুটি ছায়া গ্রহ রাহু ও কেতুর, প্রভাব পৃথিবীতে পড়ে এবং আমাদের তা গ্রহণ করতেই হয় | তাই জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে সবই গ্রহ | জ্যোতিষশাস্ত্র দু`ভাগে বিভক্ত গণিত জ্যোতিষ, ফলিত জ্যোতিষ | প্রথম ভাগের দ্বারা মানুষের গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করা হয় | এবং দ্বিতীয় ভাগের দ্বারা জন্ম কালীন গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে, মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিচার করা হয় | এই গ্রহ গুলোর ব্যালেন্সেম মাধ্যমে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয় | যেমন আমাদের শরীরের সবকিছুই আছে কোন কিছুর বেশি বা কম হওয়াকে রোগ বলা হয় | তেমনি এই গ্রহের প্রভাবে মানুষের উৎসাহ চিন্তা বুদ্ধি শক্তি স্বভাব চরিত্র গঠন হয়, এবং ব্যালেন্স ঠিক রাখে | আর এই বিষয়গুলোই হল ভাগ্য নির্ণয়ের সহায়ক | তাই জ্যোতিষ শাস্ত্রের দ্বারা ভাগ্যের বিচার করতে, গণিত জ্যোতিষ, ফলিত জ্যোতিষ, এর সাথে সাথে আরো কিছু সহযোগিতার প্রয়োজন, যেমন শরীর তত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, অর্থাৎ সমুদ্র শাস্ত্র | সমুদ্র শাস্ত্র থেকে আমরা শরীর তত্ত্ব, মন-মানসিকতার সম্পর্কে ধারণা করতে পারি | সমুদ্র শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হস্তরেখা, কারণ আমাদের মস্তিষ্ক সব অঙ্গের পরিচালনা করে ঠিকই কিন্তু মস্তিষ্কের নির্দেশ সব থেকে বেশি আমাদের হাতই পালন করে | আবার স্পর্শন ক্ষমতা আমাদের সারা শরীরেই আছে, তার মধ্যে আমাদের হাতেই বেশি, আবার হাতের প্রতিটি আঙুলের থেকে তর্জনী আঙ্গুলের বেশি স্পর্শ অনুভূতি করার ক্ষমতা আছে | তাই হস্তরেখা বিচার সমুদ্র শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ | শুধু মাত্র হাতের রেখা দেখে ও মানুষের মনের ভাবধারা স্বভাব, চরিত্র, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, এই সমস্ত কিছু বিচার করা যায়, হাতের গঠন ও হাতের রেখার মাধ্যমে ফুটে ওঠে, এবং তার বিচার বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাগ্যের কিছুটা আভাস পাওয়া যায় | যেমন ডাক্তাররা নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসে, যে আপনার সমস্ত পরীক্ষার পর এই রোগ ধরা পড়েছে, আপনি যদি এভাবেই জীবন যাপন করতে থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনার রোগ বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, আর এই নিয়ম মেনে যদি চলেন তাহলে আপনার রোগ কমানো যেতে পারে | ঠিক তেমনি এই জ্যোতিষশাস্ত্র ভাগ্য পরিবর্তন করে না, কিন্তু এই শাস্ত্রের সহায়তা নিয়ে নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করা সম্ভব |
0 মন্তব্যসমূহ